আত্নহত্যাকারীকে বাঁচানো যাবে যেভাবে
কেউ মৃত্যুইচ্ছা প্রকাশ করলে, তার সেই ইচ্ছাকে দোষারোপ করা কিংবা ব্যঙ্গ করা উচিত নয়। বরং তাকে সময় দিতে হবে, বোঝাতে হবে। থাকতে হবে তার পাশে।যেন ওই ব্যক্তি তার সেই ‘ইচ্ছা’ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। বিষয়টি লুকিয়ে রাখার নয় বলেও মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ফরাসি দার্শনিক ডেভিড এমিল ডুর্খাইমকে উদ্ধৃত করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চার ধরনের মানুষ আত্মহত্যা করে। তারা হলেন—অতি নিয়ম মানা, নিয়ম হীন, অতি সামাজিক ও সমাজচ্যুতরা।
আত্মহত্যার দুই ধরন। এগুলো হলো, ইমপালসিভ (হঠাৎ আত্মহত্যা) এবং ডিসিসিভ (সিদ্ধান্ত নিয়ে বা পূর্বপরিকল্পিত)। তবে ডিসিসিভ আত্মহত্যাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রিভেন্টেবল বা প্রতিরোধযোগ্য। আর যারা আগে থেকে আত্মহত্যা বা মৃত্যুইচ্ছার কথা বলা মানুষগুলোকে যদি উপহাস না করে, এড়িয়ে যাওয়া বা দূরে ঠেলে না দিয়ে বোঝানোর সুযোগ পাওয়া যায়, তাদের কথা শোনা যায়, তাহলে আত্মত্যা ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব।
প্রতিটি মানুষের মনের ভেতরেই দুটি অংশ রয়েছে, দ্বিতীয় সত্তা রয়েছে, যে বাঁচতে চায়। সে ভেতর থেকে নানাভাবে সচেতন করতে চায়, সংকেত দিয়ে যায়। এই সংকেত তার অবচেতন মনে বেঁচে থাকার এক ধরনের আকুতি। আর এই সংকেতকেই আমাদের পড়তে হবে, বুঝতে হবে।
কেউ যখন আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়, উপহাস করা হয়, এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ এটা না করে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে, সামাজিক কর্মকাণ্ডের ভেতরে তাকে অংশগ্রহণ করাতে হবে। এ ধরনের কাজ করার পর যখন সে মানুষের সঙ্গে মিশবে, কথা বলবে, তখন এ ধরনের কাজ করার প্রবণতা কমে যায়। ’
কোনোভাবেই এ ধরনের মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ না করা, ব্যঙ্গ না করা, ভয়, হুমকি, ধমক দেওয়ার দরকার নেই মন্তব্য করে ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আত্মহত্যার যেকোনো সংকেতকে সিরিয়াসলি নিতে হবে। তার পাশে থাকতে হবে।’
যখন কাউকে সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে হয়, তখনই সে আত্মহত্যার মতো কাজ করে। সে কারণে আমাদের উচিত, যেকোনো ধরনের ‘মৃত্যুইচ্ছা’ প্রকাশ করা মাত্রই তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।
সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার হলেও সেটা যখন করা হয় না, তখন এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে। পরিবার থেকে আলাদা হওয়া, একা একা থাকা বা ডিপ্রেশনে ভোগার মতো এই মানসিক সমস্যা যাদের থাকে, তারা আসলে ধীরে ধীরে ওইদিকেই চলে যায়। তাদের যথাযথ চিকিৎসা না হলে নিজের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
No comments